তনুর গাওয়া সেই গানটি এখন শুধুই কাঁদায়

ওই কবরখানায় শুয়ে আছে নেকড়ের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এক কিশোরী। পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিয়েছে হায়েনারা। আর কোনোদিন ফিরে আসবে এই সুন্দর পৃথিবীতে। আর কখনো যাবে না কলেজে। যাবে না টিউশনিতে। থিয়েটারের মঞ্চেও দেখা যাবে না প্রিয় মুখটিকে।

সোহাগী জাহান তনু নেই, আছে তার অনেক স্মৃতি। বেঁচে আছে তার ফেসবুক পেজ আর সেখানে আপলোড করা নানা ছবি ও ভিডিও। সেখানেই পাওয়া গেল তনুর একটি ভিডিও, যেখানে গিটার বাজিয়ে গান গাওয়ার চেষ্টা করছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী সেই ছাত্রীটি।

গত ২১ জানুয়ারি ভিডিওটি আপলোড করে তনু লিখেন, ”just try korlam……গিটার বাজানো…..1st time…..”। স্বল্প আলোয় হিজাব পরা তনুর অস্পষ্ট অবয়ব দেখা গেলেও কণ্ঠ ছিল স্পষ্ট। এরপর অসংখ্য মন্তব্য পড়তে থাকে ভিডিওটির নিচে।

অনেকে তার কণ্ঠের প্রশংসা করে গানের চর্চা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। প্রায় সবারই মন্তব্যের উত্তর দেন তনু। অনেকে জায়গাটার কথা জানতে চান। তনু জানান, এটা

তার এক বন্ধুর রুম। আজও তনুর ফেসবুক পেজে অনেকে লিখছেন। তার জন্য দোয়া করছেন। হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন, কিন্তু সাড়া নেই প্রাণবন্ত সেই মেয়েটির। তিনি আজ পরপারে।

সর্বশেষ গত ২০ মার্চ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে ৭টি ছবি আপলোড করেন তনু (ফেসবুকে Jahan Zara)। ওইদিন রাতেই তনুকে পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করে ঝোপের মধ্যে ফেলে যায় দুষ্কৃতরা।

তনুর শেষ আপলোড করা ছবিগুলোর নিচে এখন শুধু বিদায়ের সুর। এআরজে আকিফ নামে একজন লিখেছেন, ‘দোস্ত, তুই যে এইভাবে চলে যাবি ভাবতেও পারিনি। যাওয়ার আগে একটু বলে গেলে কী হতো? সব জায়গায় যাওয়ার আগে বলে যাস, তো এইটা বললি না কেন?? দোয়া করি আল্লাহ তোকে জান্নাতবাসী করুক। আমিন।

ফখরুল এইচ পলাশ লিখেছেন, ”দোস্ত কখনো ভাবিনি তোকে এভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ও পৈশাচিক এক অপশক্তি এসে আমাদের কাছ থেকে থাবা মেরে নিয়ে যাবে। সত্যি কিছুতেই তোর মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছি না। দোয়া করি আল্লাহ তোকে জান্নাত দান করুক।”

গত রোববার সন্ধ্যায় টিউশনি করে বাসায় ফেরার পথে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় পাশবিক নির্যাতনের পর হত্যা করা হয় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের সম্মানের ছাত্রী সোহাগী জাহান তনুকে।

পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ময়নামতি সেনানিবাসের অভ্যন্তরে পাওয়ার হাউসের পানির ট্যাংকসংলগ্ন স্থানে তনুর মৃতদেহ পাওয়া যায়। কালভার্টের পাশে ঝোঁপের ভেতর মাথা থেঁতলানো অর্ধনগ্ন মৃতদেহ পড়ে ছিল তার। সোমবার নিহতের বাবা ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতদের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

তনু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে দেশব্যাপী ঝড় উঠেছে। ৬দিন হলেও হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারায় বিভিন্ন তরফে নিন্দা জানানো হচ্ছে। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল হচ্ছে বিভিন্ন জেলায়। ফেসবুকে তারকারাও এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর